২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে সরকারি ডেন্টাল কলেজে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জন (বিডিএস) কোর্সে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ শে এপ্রিল। বর্তমান এই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে যদি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় তাহলে তোমাদের হাতে সময় রয়েছে আর এক মাসেরও কম। আর এই অল্প সময়ে কিভাবে ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা যায় এবং সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া যায় আমরা আজকে সে বিষয়ে কথা বলবও।
প্রথমে আগে দেখা যাক ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের মানবন্টন
ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে মোট ৩০০ নাম্বারের ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২০০ নম্বর থাকবে শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি ফলাফলের উপর।
যেভাবে হিসাব করা হয় এসএসসি ও এইচএসসি এর প্রাপ্ত জিপিএ নম্বরের মানবন্টন-
এসএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএকে ১৫ দিয়ে গুণ করার পর এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত জিপিএকে ২৫ দ্বারা গুণ করে দুই প্রাপ্ত গুণফলের সমষ্টি থেকে জিপিএ-এর এ মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে।
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নের মানবন্টন-
জীববিজ্ঞান ৩০,
পদার্থ বিজ্ঞান ২০,
রসায়ন ২৫,
ইংরেজি ১৫
এবং সাধারণ জ্ঞান ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে ১০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সকল কনফিউশন মূলক প্রশ্ন থাকে সেগুলোর ভালোভাবে সলভ করা কারণ কনফিউশন মূলক প্রশ্নগুলোর উত্তর সঠিকভাবে দিতে পারলে পরীক্ষায় ভালো করা সম্ভব।কারণ প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য আপনার নাম্বার থেকে কর্তন করা হবে ০.২৫ নম্বর। অর্থাৎ কোন প্রশ্ন ভুল গেলে আপনি এক নম্বর কমছে না কমছে ১.২৫ নম্বর। তাই কনফিউশন মূলক প্রশ্ন গুলো সঠিকভাবে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিছু কথা-
প্রত্যেকেরই একটি স্বপ্ন থাকে। হোক খুবই ছোট কিংবা আকাশ ছোঁয়া। হতে পারে পরিবারের জন্য কিছু করার স্বপ্ন বা সমাজের সবার উপকারের জন্য। মোটকথা স্বপ্নই একজন মানুষকে বেঁচে থাকার শক্তি জোগায়। এই স্বপ্নই একজন মানুষকে তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে। চিকিৎসক হয়ে দেশ ও দশের উপকারের স্বপ্ন দেখেনি, এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিন। শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে অনেকের অনেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন দেখে । একজন চিকিৎসকের পক্ষে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমত সেবা ও সাহায্য করা যতটা সম্ভব, অন্য পেশা থেকে ততটা নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করার প্রয়াস একটু হলেও কষ্টকর। তাই পরোপকারের মহান ব্রত অন্তরে ধারণ করে অনেকেই মনের গহীনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসক হিসাবে নিজেকে যোগ্যতর করে উপস্থাপন করার এই পথ বড়ই বন্ধুর। এজন্য চাই অসামান্য আত্মনিয়োগ, কঠোর শ্রম, দৃঢ় সংকল্প আর সময়োপযোগী অধ্যয়ন।
আর তোমার স্বপ্ন পূরণে আমাদের কিছু পরামর্শ এবং তোমার পাঠক্রম কেমন হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা-
ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার জন্য জীববিজ্ঞান এর প্রস্তুতি-
জীব বিজ্ঞানে ভালো করতে হলে মূল বইয়ের উপর থাকতে হবে ভালো প্রস্তুতি। তাই মূল বই ফোকাস করে অন্যান্য বই সহযোগী হিসেবে নিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। মূল বই যত বেশি পারা যায় তত বেশি রিভিশান দিতে হবে। যত বেশি রিভিশান ভর্তি পরীক্ষা ভালো করার সম্ভাবনা তত বেড়ে যাবে ।তাই ভর্তি পরীক্ষা মূল বইয়ের কোন বিকল্প নেই। সেইসাথে বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় আসা প্রশ্ন গুলো দেখে নেওয়া যেতে পারে ।যাতে করে প্রশ্ন সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা তৈরি হয়।
ডেন্টাল পরীক্ষা রসায়নের প্রস্তুতি-
পাঠ্যবইকে প্রস্তুতির হাতিয়ার হিসাবে দেখো।পাঠ্য বইয়ের টপিকগুলো ভালোভাবে দেখে নাও।প্রশ্ন ব্যাংক থেকে বিগত বছরের প্রশ্নের সমাধান গুলো দেখে নাও।এবং নিজেকে নিয়মিত যাচাই করও।
ডেন্টাল পরীক্ষা পদার্থ বিজ্ঞানের প্রস্তুতি-
এই বিষয়ে থিওরিকেল বিষয়গুলোভাবে দেখে নিতে হবে।সাধারণত ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় তেমন জটিল কোন প্রশ্ন পদার্থ বিজ্ঞান থেকে করে না।সূত্র ভালো জানা থাকলে ও বিভিন্ন রাশিরমান জানলে মোটামুটি ভর্তি পরীক্ষা পদার্থ বিষয়ে ভালো নাম্বার আসবে।
ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা ইংরেজী বিষয়ে প্রস্তুতি-
মেডিকেল ও ডেন্টাল প্রশ্নপত্রে যেসব বিষয়ের ওপর ইংরেজি প্রশ্নগুলো (যেমন Voice, Narration, Synonym, Antonym, Correction, Spelling, Preposition, Phrase & Idioms ইত্যাদি) সেগুলো সমাধান করার পাশাপাশি ভালো কোনো গ্রামার বই থেকে ওই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত পড়তে হবে।সেই সাথে দেখে নাও প্রশ্ন ব্যাংকে প্রশ্নের ধরণ।
ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক প্রস্তুতি-
যেকোনো সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শেষবারের মতো দেখে নাও।
যে টপিকগুলি খুবই ভালো করে পড়বে:
• বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রথম, বৃহত্তম, ক্ষুদ্রতম
• বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিখ্যাত স্থাপত্য ও ভাস্কর্য
• পুরস্কার ও সম্মাননা
• বিশ্ব ইতিহাস
• দিবসসমূহ
•সাম্প্রতিক বিষয়াবলি
• খেলাধুলা
• বাংলাদেশের নদ-নদী
• বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ
• বাংলা সাহিত্য
তাছাড়া ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা ভালো করতে নিয়মিত মাসিক সাধারণ জ্ঞান বই এর প্রতি নজর দিতে পারো।
সর্বশেষ কথা-
কখনোই আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না, আবার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসও কিন্তু ক্ষতি বয়ে আনতে পারে। সেইসাথে ভর্তি প্রস্তুতির দিকে বেশি জোর দিতে গিয়ে নিজে অসুস্থ হয়ে পড়লে কিন্তু চলবে না। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সবার আগে সুস্থ থাকাটা ভীষণ জরুরি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিসহ ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে এই বছর।অন্যান্য বছরের তুলনা এই বছর ভর্তি পরীক্ষা সবার জন্য আলাদার ও অন্য অভিজ্ঞতার।অনেকে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষারজন্য তেমন প্রস্তুত না। অনেকে চিন্তিত কিভাবে গুছিয়ে পড়বও।
আপনাদের জন্য আমাদের আজকের এই আর্টিকেল যাতে আমরা তুলে ধরবও কিভাবে আপনি গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিবে-
বিজ্ঞান বিভাগের জন্য প্রথমে আসা যাক বিভাগীয় বিষয়গুলোর ব্যাপারে-
পদার্থ বিজ্ঞানের প্রস্তুতি-
- প্রত্যেকটা অধ্যায়ের মূল সূত্রগুলো ব্যাখাসহ মুখস্থ রাখতে হবে।
- বইয়ের সবগুলো একক, মাত্রা এবং সমানুপাতিক ও ব্যাস্তানুপাতিক সম্পর্ক ভালো ধারণা থাকতে হবে।
- তপন স্যার ও আমীর হোসেন স্যারের বইয়ের প্রতিটি চ্যাপ্টারের শেষে অনুশীলনের জন্য যে এমসিকিউগুলো আছে সেগুলো ভালো করে সমাধান করতে হবে।
- শাবিপ্রবি ব্যতীত বাকি ১৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যতগুলো সম্ভব হবে স্পেশালি খুবি, ইবি, জবি ও বিজ্ঞান প্রযুক্তি এর প্রশ্নগুলো সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। শাবিপ্রবির সমাধান করতে পারলে ভালো না পারলে স্কিপ করতে পারেন। এবছর শাবিপ্রবি গুচ্ছতে থাকায় শাবিপ্রবি টাইপ প্রশ্ন হবে না। বাকি ১৯টি ভার্সিটির প্রশ্নের মান বিবেচনায়ই প্রশ্ন করবে।
রসায়ন বিষয়ের প্রস্তুতি-
- জৈব যৌগ পারলে ভালো না পারলে এতো প্যারা নেওয়ার কিছু নেই। পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো পড়লেই হবে।
- যতো বেশিবার সম্ভব হাজারী ও নাগ স্যারের মূল বইটা রিভিশন দিতে হবে।
- হাজারী ও নাগ স্যারের বইয়ের অনুশীলনের নৈর্ব্যক্তিক অবশ্যই সমাধান করতে হবে।
- শাবিপ্রবি ছাড়া বাকি ১৯টি ভার্সিটির সমাধান করতে হবে।
জীববিজ্ঞান বিষয়ের প্রস্তুতি –
- ইউনিভার্সিটির বায়োলজি প্রশ্ন এতো গভীর থেকে করেনা। মেইন হাইলাইট করা লাইনগুলো থেকে প্রশ্ন করে। সাথে পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করলেই যথেষ্ট।
- যারা মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা শুধু বিগত বছরের প্রশ্নগুলো মুখস্থ করে গেলে খুব সহজেই ১৭-১৮ পাওয়া সম্ভব। অনেকে হয়তো ২০/২০ ও পাবে।
উচ্চতর গনিতের প্রস্তুতি-
- ক্যালকুলাসের অন্তরীকরণ পার্ট টাতে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। যোগজীকরণের পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নগুলো বুঝে সমাধান করলে এক থেকে দুইটা কমন হুবহু কমন পাওয়া যাবে। আর স্থিতিবিদ্যা না পারলে স্কিপ করতে পারেন। বাকিগুলো ভালো করে পারলেই যথেষ্ট।
- ম্যাট্রিক্স, বিন্যাস সমাবেশ, বৃত্ত, সরলরেখা, কনিক, সম্ভাবনা, ২য় পত্রের ত্রিকোণমিতি, দ্বিপদী বিস্তৃতি, বহুপদী, জটিল সংখ্যা এই অধ্যায়গুলো খুব ভালোভাবে পড়তে হবে।
বাংলা বিষয়ে প্রস্তুতি-
- বাংলা প্রথম পত্র বইটা গুরুত্বের সাথে আরেকবার রিভিশন দিয়ে দাও।বিগত বছরের প্রশ্নগুলো দেখে নাও প্রশ্ন ব্যাংক থেকে। কবিতা ও লেখকের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখও।
- বাংলা দ্বিতীয় পত্রের জন্য নবম দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ বইটা ভালো ভাবে দেখে নাও।বিভিন্ন প্রশ্ন ব্যাংক থেকে বিগত বছরের প্রশ্ন গুলো দেখে নাও।
ভর্তি পরীক্ষায় বাংলা ব্যাকরণের যত দ্বিধা
ইংরেজী বিষয়ে প্রস্তুতি-
- ইংরেজি এর জন্য Right form of verb, Preposition, voice change, narration, translation, changing sentence, synonym & antonym, correction এই বিষয়গুলোই যথেষ্ট।
- ভোকাবুলারির জন্য নিয়মত পত্রিকা পড়তে পারও। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ইংরেজী প্রথম পত্র বইটা আবার অর্থ সহ ভালোভাবে দেখে নাও।
- আরো বিস্তারিত জানতে এই আর্টিকেল দেখুন- ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজীতে ভয়? সমাধান এখানে
তথ্য ও যোগাযোগ বিষয়ে প্রস্তুতি-
- এবছর ভর্তি পরীক্ষায় আইসিটি বিষয় নতুন সংযুক্ত হয়েছে। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। একটু টেকনিক্যালি পড়াশুনা করলে ইজিলি ১৬-১৭ মার্ক পাওয়া সম্ভব। এর জন্য আলাদা কোনো বই পড়তে হবে না। টেক্সট বুক থেকে জ্ঞানমূলক ধরনের এমসিকিউগুলো একটু ভালো করে পড়লেই হবে।
- তাছাড়া প্রতিটা অধ্যায় ভালোভাবে পুনরায় রিভিশান দিতে হবে। সকল অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন আসতে পারে এমন বিষয়গুলো পড়ে নাও।